▶ কিভাবে কুয়াকাটায় যাবেন :-
নদী এবং সড়ক এই পথেই ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অনেক কম সময়ে এবং সহজে যাওয়া যায়।
বাসে করে কুয়াকাটা :-
ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৮০ কিলোমিটার।বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা। ঢাকার আবদুল্লাপুর, আরামবাগ, সায়েদাবাদ, গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, এনা, শ্যামলী, লাবিবা, হানিফ, গ্রীনলাইন সহ আরও অনেক পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত।
লঞ্চে করে কুয়াকাটা :-
নদী পথে সদরঘাট থেকে সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত কোন লঞ্চ যায় না।আপনাকে লঞ্চে করে বরিশাল অথবা পটুয়াখালি গিয়ে সেখান থেকে বাসে করে কুয়াকাটা যেতে হবে। সব থেকে ভালো হয় লঞ্চে করে পটুয়াখালীর আমতলী লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বাস, সিএনজি অথবা অটোরিকশা করে খুব সহজেই কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে পারবেন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর থেকে যাত্রী সংকটের কারনে ঢাকার সদরঘাট থেকে আগের মত ভালো সার্ভিসের কোন লঞ্চ চলাচল করেনা। তাই লঞ্চে যেতে চাইলে আগেই খোঁজ নিতে হবে আপনার ভ্রমনের দিনে কোন ভালো লঞ্চ চলাচল করবে কিনা।
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পটুয়াখালি যাবার লঞ্চ পেয়ে যাবেন এবং সকাল ৬টার দিকে পটুয়াখালি পৌছায়। লঞ্চে ডেকের ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা, ভি আই পি কেবিন ভাড়া ৭০০০ টাকার মত।
▶ কুয়াকাটা হোটেল ও রিসোর্ট :-
কক্সবাজারের মত কুয়াকাটাতে এত হোটেল রিসোর্ট না থাকলেও কুয়াকাটায় আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল পেয়ে যাবেন। যেগুলোর ভাড়া ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে অফ সিজনে গেলে আরও কমের মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন। বাজেট যদি আপনার সমস্যা না হয় তাহলে চলে যেতে পারেন শিকদার রিসোর্ট এর মত অভিজাত রিসোর্টে। কুয়াকাটা তে ভালো সি ভিউ কোন হোটেল নেই। শুক্র শনি বা সরকারি ছুটির দিন বাদে গেলে কুয়াকাটা গিয়ে রুম দেখে তারপর ভাড়া ঠিক করতে পারবেন কিন্তু ছুটির দিন কিংবা পরিবার নিয়ে গেলে আগে থেকেই হোটেল বুকিং করে যাওয়াটাই উত্তম।
আরো বিস্তারিত জানুন :-
▶ কুয়াকাটায় কোথায় খাবেন :-
কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশেপাশেই অনেক খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন। আপনার বাজেট অনুযায়ী এই সব হোটেল গুলোতে খেয়ে নিতে পারেন তবে কোন খাবার অর্ডার করার আগে অবশ্যই সেই খাবারের দাম জেনে তারপর অর্ডার করবেন।
কুয়াকাটায় গেলে ফিশ বারবিকিউ এর স্বাদ নিতে ভুল করবেন না। জিরো পয়েন্টের পাশেই ফিশ ফ্রাই মার্কেট। আপনি দরদাম করে পছন্দ মতো সাগরের তাজা মাছ কিনে দিলে আপনার সামনেই তারা বারবিকিউ করে দিবে।
▶ কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান :-
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সি বিচ।এছাড়াও কুয়াকাটার পশ্চিম এবং পূর্ব পাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
• শুঁটকি পল্লী
• লেবুর চর
• ঝিনুকের সি বিচ
• তিন নদীর মোহনা
• সুন্দরবনের একাংশ বা ফাতরার বন
• ম্যানগ্রোভ বন
• গঙ্গা মতির চর
• কাওয়ার চর
• কুয়াকাটার কুয়া
• মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
• রাখাইন তাতঁ পল্লী
• লাল কাঁকড়ার বিচ
• ঝাউ বন
কুয়াকাটার এই সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখার জনপ্রিয় মাধ্যম হলো মোটরসাইকেল কিংবা ইজিবাইক। ৭০০-১২০০ টাকার মধ্যে মোটরসাইকেল ভাড়া পেয়ে যাবে এক মোটরসাইকেলে দুইজন যেতে পারবেন এবং ১০০০-১৫০০ তার মধ্যে ইজিবাইক পেয়ে যাবেন একটি বাইকের ৬-৮ জনের মত যেতে পারবেন। তবে এগুলো ভাড়া করার আগে অবশ্যই ধরদাম করে নেবেন কারণ তারা অনেক ভাড়া চাইবে।
▶ কুয়াকাটার ট্যুর প্লান :-
কোন জায়গার ট্যুর প্লান নির্ভর করে আপনি সেখানে কতদিন থাকবেন কোন কোন জায়গায় ঘুরে দেখবেন তার ওপর। তবে এখানে এক রাত দুই দিনের ট্যুর প্লান শেয়ার করা হলো। প্রথমত রাতের বাসে কিংবা লঞ্চে করে চলে আসুন কুয়াকাটাতে।
১ম দিন :-
যেহেতু সকাল সকাল বাস আপনাকে কুয়াকাটাতে নামিয়ে দিবে তাই বাস থেকে নামার পর ফ্রেশ হয়ে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশেপাশে অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন সেখান থেকে সকালের নাস্তা করে নেন। সকালের নাস্তা শেষ করার পর যদি আগে থেকে হোটেল বুকিং করে না আসেন তাহলে আপনার বাজেট অনুযায়ী কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশেপাশে অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন যেকোন একটি হোটেল ঠিক করে নিন। হোটেল ঠিক করা শেষ হলে কিছুক্ষণ রেস্ট নেই চলে যান কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সি বিচে চাইলে দুপুর পর্যন্ত সি বিচে কাটিয়ে দিতে পারেন। তারপর একটি বাইক ভাড়া করে বের হয়ে পড়ুন কুয়াকাটার পশ্চিম পাশের দর্ষণীয় স্থানগুলোর উদ্দেশ্যে। চাইলে দুপুরের খাবার জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন হোটেলগুলো থেকেও করে নিতে পারেন অথবা লেবুর বনে গিয়েও করতে পারেন।বিকালে সময়টুকু তিন নদীর মোহনায় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিতে পারেন।
২য় দিন :-
বাইক বাড়ার সময় বাইক ওয়ালাকে অবশ্যই বলে দিবেন দ্বিতীয় দিন আপনার হোটেলের সামনে খুব সকাল সকাল চলে আসতে খুব সকাল সকাল বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন গঙ্গা মতির চরের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে খুব ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায়।ফেরার পথে মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পল্লী, লাল কাকড়ার বিচ, কুয়াকাটার কুয়া, ২০০ বছরের পুরাতন নৌকা দেখে হোটেলে ফিরবেন।দুপুরের খাওয়া শেষ করে চলে যান ফাতরার বন কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বন যেতে চাইলে আপনাকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। তবে লঞ্চে করে ঢাকা ফিরতে চাইলে অবশ্যই ৫ টার মধ্যে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটে থাকতে হবে।
▶ ভ্রমণের সতর্কতা :-
ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনা কোন ভাবেই কাম্য নয় তাই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার আগে সেই জায়গাটি নিরাপদ কিনা তা অবশ্যই জেনে নিয়ে তারপর সমুদ্রের নামবেন। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া সমুদ্রে নামবেন না। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে বাইক ভাড়া, যে কোন কিছুতে দরদাম ঠিক করে নিন। ঘুরতে গিয়ে ঘোরার জায়গা গুলোকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করবেন না, তাই চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার।
0 Comments