১২০ কি.মি. বিস্তৃত কক্সবাজার (Cox's Bazar) তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত।তাইতো প্রতিদিনই হাজারো পর্যটকের ভিড় জমে এই কক্সবাজারে। কক্সবাজার (Coxs Bazar) বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম । ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সাগর দেশী বিদেশি পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ ও মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্থের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে সবসময়। তাই আজকের ব্লগে কক্সবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ভ্রমণ গাইড দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
▶ কক্সবাজার ভ্রমণের সঠিক সময় :-
কক্সবাজার ভ্রমণের জন্যে সবাই শীতকালকেই বেছে নেয়। তবে কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে বছরের যে কোন সময়ই আপনি বেড়াতে যেতে পারবেন। একেক সময় একেক রূপে ধরা যায় কক্সবাজার। তবে শীতকাল ছাড়া অন্য সময় গেলে একটা সুবিধা পাবেন হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই তুলনামূলক দাম অনেক কমে থাকে।
▶ কিভাবে কক্সবাজার যাবেন :-
বাস, ট্রেন এবং বিমানযোগে এই তিন ভাবে খুব সহজে কক্সবাজার যাওয়া যায়।
বাসে করে কক্সবাজার :-
ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, সায়দাবাদ, আরামবাগ ফকিরাপুল, কল্যাণপুর সহ মোটামুটি সব বাসটার্মিনাল থেকেই সোহাগ, হানিফ, শ্যামলী, এনা, গ্রীন লাইন, সেন্টমার্টিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহনসহ অসংখ্য পরিবহনের বাস পেয়ে যাবেন কক্সবাজার যাওয়ার জন্য। নন এসি বাসে ভাড়া পড়বে ১০০০-১১০০ টাকা। এছাড়াও এসি এবং স্লিপার কোচ বাস পেয়ে যাবেন যার ভাড়া ১৩০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে করে কক্সবাজার :-
ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার (Cox Bazar) যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস কিংবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ও ছাড়ার সময়
ট্রেন রুট | যাত্রা শুরু | শোভন চেয়ার | স্নিগ্ধা | যাত্রা শেষ |
---|---|---|---|---|
ঢাকা টু কক্সবাজার | সকাল ৬:১৫ | ৬৯৫ টাকা | ১৩২৫ টাকা | দুপুর ৩:০০ |
কক্সবাজার টু ঢাকা | রাত ৮:০০ | ৬৯৫ টাকা | ১৩২৫ টাকা | ভোর ৪:৩০ |
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ও ছাড়ার সময়
ট্রেন রুট | যাত্রা শুরু | শোভন চেয়ার | স্নিগ্ধা | যাত্রা শেষ |
---|---|---|---|---|
ঢাকা টু কক্সবাজার | রাত ১০:৩০ | ৬৯৫ টাকা | ১৩২৫ টাকা | সকাল ৭:২০ |
কক্সবাজার টু ঢাকা | দুপুর ১২ঃ৩০ | ৬৯৫ টাকা | ১৩২৫ টাকা | রাত ৯:১০ |
বিমানে করে কক্সবাজার :-
বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৫০০০-১১,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
▶ কক্সবাজারে কোথায় থাকবেন :-
কক্সবাজারে থাকার জন্য অসংখ্য হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। এ সকল হোটেল গুলোর বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৫০,০০০ এর বেশি মানুষ। তাই অফ সিজনে হোটেল বুকিং না দিয়ে গেলেও হোটেলে রুম পাবার নিশ্চয়তা থাকে। তবে মনে রাখবেন ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস মূলত কক্সবাজারের পিক সিজন এই সময় হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়াই সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ। তা না হলে সারারাত বাইরে থাকার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনার হতে পারে।
কক্সবাজারের কলাতলী, লাবনী এবং সুগন্ধা পয়েন্টের আশেপাশে অসংখ্য হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে মনে রাখবেন বিচ থেকে এবং মেইন রোড থেকে হোটেল যত ভিতরে হবে হোটেলের দাম তত কমতে থাকবে। কক্সবাজারে প্রতি রাত থাকার জন্য ৫০০ টাকা বাজেটের রুম যেমন পেয়ে যাবেন তেমনি ফাইভ স্টার কিংবা থ্রি স্টার মানের অসংখ্য হোটেল এবং রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। যেগুলোতে প্রতিরাত থাকতে আপনাকে ২০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে।
আরো বিস্তারিত জানুন :-
▶ কোথায খাবেন :-
কক্সবাজারের মোটামুটি সকল হোটেল/রিসোর্টেরই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে চাইলে সেখানেও খেতে পারেন। যদি সেখানে না খেয়ে বাহিরে খেতে চান তাহলে কক্সবাজার বিচ সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে পেয়ে যাবেন। চাইলে সেখানে আপনার পছন্দ অনুযায়ী রেস্টুরেন্টে ও খেতে পারেন। সকালের নাস্তায় পরটা, ডিম ভাজি, ডাল, সবজি থেকে শুরু করে ডিম খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়ি সহ আরো হরেক পদের খাবার পেয়ে যাবেন দাম নিবে ৭০-২০০ টাকা পর্যন্ত। দুপুরের খাবারে পাবেন ভাত, বিভিন্ন রকমের ভর্তা, মাছ, মাংস এছাড়াও ১৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে অনেক রকমের খাবার প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে বিচের পাড়ে অসংখ্য ভ্রাম্যমান সামুদ্রিক মাছের দোকান পেয়ে যাবেন পছন্দ মত মাছ দরদাম করে কিনে সেই খান থেকেই বারবিকিউ করে নিতে পারেবেন। তবে মাছ কিনার সময় অবশ্যই ভালো করে দরদাম করে নিবেন কারণ তারা মাছের দাম অনেক বেশি চাইবে।
▶ কি কি করবেন :-
সাগরের উত্তাল জলরাশি, বেলাভূমিতে হাটা, সাগরের জলে রোদ্রস্নান আর সূর্যাস্থের নয়নাভিরাম দৃশ্য গুলো প্রতি মূহুর্তেই আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। এছাড়াও লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বিচের পাশে অসংখ্য রাইট বা বিচ একটিভিটি পেয়ে যাবেন দরদাম করে সেগুলো করতে পারেন। সমুদ্রের পুরো রূপ উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সূর্যউদয় ও সূর্যাস্তের সময়টুকু বিচে কাটাতে হবে। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সমদ্র সৈকতের ভিন্ন রূপ দেখে আপনি নিশ্চিত বিমোহিত হবেন। পূর্ণিমার সময় গেলে অবশ্যই সন্ধ্যার পরের সময়টুকু সৈকতে কাটাবেন।
আরো বিস্তারিত জানুন :-
▶ কক্সবাজারের দর্শনের স্থান :-
কক্সবাজার ঘুরতে গেলে শুধু সমুদ্র সৈকতই না ঘুরে দেখতে পারেন আশেপাশের আরো বেশ কিছু দর্শনের স্থান।
• ইনানী সমুদ্র সৈকত
• হিমছড়ি
• মহেশখালী
• রামু বৌদ্ধ বিহার
• রেডিয়ান্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
• পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত
• কাকড়া বীচ
• ঝাউবন
• দরিয়া নগর
এছাড়াও চাইলে ২০০০-২৫০০ টাকা খরচ করে প্যারাসিলিং করতে পারেন যা আপনার ভ্রমণের যুগ করতে পারে ভিন্নমাত্রা।
▶ ভ্রমণের সতর্কতা :-
• যেকোনো প্রয়োজনে টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। হটলাইন +০৮৮০১৭৬৯৬৯ ০৭৪০
• সমুদ্র সৈকতে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন।
• কোন খাবার অর্ডার করার আগে এবং আটো কিংবা কোন রাইডে উঠার আগে দাম শুনে নিবেন।
• ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলার আগে দাম এবং কয়টা ছবি নিবেন তা ঠিক করে নিবেন। তা না হলে তারা একই ছবি একাধিক বার তুলে আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।
0 Comments